সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সামাজিকীকরণের ধারণা


সমাজ পর্যবেক্ষনের যায়গা থেকে যতটুকু বুঝেছি, আপনার দাদা খেতে পেত না। আপনার বাবাকে কষ্ট করে, নিজে না খেয়ে, খাওয়ায়ে বড় করে গেছে। আপনি বাপের ধনে পোদ্দারি করেন। এই আর কি! বাপের ধনে পোদ্দারি করা সহজ। বাপের না থাকলে, বুঝতেন। একবিংশ শতকে যখন কামলা দেওয়া লাগতো, তখন বুঝতেন। রোদে পোড়ার জ্বালা কত!

বাপের ধনে পোদ্দারি করে, মানুষকে ছোট ভাবা চিন্তার অস্বাভাবিক দীনতা। বোদ্ধাগণ আপনাকে কার্টুন মনে করে। মানে ভাড় মনে করে, বিনোদন ও হাসির পাত্রে পরিণত করে।

আপনার প্রয়োজন না হলেও, সব পেশা পৃথিবীর প্রয়োজন। পৃথিবীর সব মানুষই সমান। পেশাগত কারণে কেউ ছোট-বড় হয় না। এটা একধরণের শঠতা। শোষন-শাসনের অপচেষ্টা। তবে হ্যাঁ, মানুষ তার চিন্তার সমান বড় বা ছোট হয়। বয়সের নিরিখে ছোট বড় হতে পারে। পেশা একটি বিষয়-নিরপেক্ষ ভাবমূলক ধারণা। ব্যক্তিভেদে আলাদা। একই কাজ বিভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে করে থাকেন। মেলে না।

আপনি পেশাগত কারণে কাউকে ছোট ভাবলে, আপনার পূর্বপুরুষ ছোট ছিল, এটাই প্রমাণিত হয়। সব কথার এককথা, চিন্তার সংকীর্ণতা অন্যকে ছোট-বড় জ্ঞান করতে উৎসাহিত করে। নিজেকে ছোটলোক প্রমাণ করতে এটুকুই যথেষ্ট। যাদের সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, তাদের এধরনের চিন্তার সংকীর্ণতা ও দুৰ্গতি তৈরি হয়।

সামাজিকীকরণের ধারণা, মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি দেখে অবাক হবেন যে কতিপয় মানুষ হরহামেশা অন্যের সাথে মেলামেশা করতে গিয়ে কত বিপাকে পড়ে। ক্ষেত্র বিশেষে সামাজিক সমস্যারও সম্মূখীন হয়। আপনি যার সাথে মিশছেন বা কথা বলছেন, আপনি নিজেকে আপনার যায়গায় ধরে রাখতে পারছেন কি না, এটা গুরত্ববহ বিষয়।

আপনি নিজেকে ধরে রেখে যত বেশি মানুষের সাথে মিশতে পারবেন, তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন, আপনার সামাজিকীকরণ ততবেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠবে। আপনার সামাজিক দক্ষতা তত বাড়বে।

নিজেকে ধরে রাখার মানে হচ্ছে, অন্যের মত বিষয়ের চর্চা না করা, অন্যের ক্ষতি না করা, অন্যের দ্বারা নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া। অনেকে রয়েছেন, নিজেকে অন্যের থেকে পণ্ডিত মনে করে; এমনকি সেটা জাহির করার জোর প্রচেষ্টাও চালায়। এটা বোকামি। এদের যথাযথ সামাজিকীকরণ হয়নি। বোধশক্তি কম, চাপার জোর বেশি। পৃথিবীতে শেখার, জানার শেষ হয় না।

সামাজিক দক্ষতার অভাব তখন প্রমাণিত হয়, যখন ব্যক্তি মানুষ অন্যের সাথে কুতর্ক, কুযুক্তি দিয়ে অন্যায় আচরণে লিপ্ত হয়। এগুলো মূলত কুশিক্ষার কারণে ঘটে। অশিক্ষায় দোষ নেই। তবে, অশিক্ষা যখন কুশিক্ষার নামান্তর তখন তা ক্ষতিকারক।

যে সকল লোকের শৈশবে-কৈশোরে বাবা-মা যথাযথ সামিজিকীকরণের পদক্ষেপ নেয়নি তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো প্রকট। শিশুর সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে বাবা-মায়ের পাশাপাশি থাকাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল শিশু বাবা-মায়ের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে, তাদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়।

একটি পরিবার শিশুর সামাজিকীকরণের মূল ভিত্তি। পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে যে সকল শিশুকে কৌশলে বাইরে রাখা হয়, বাবা-মা কার্যত ঐ সকল শিশুর ক্ষতি করে। পরবর্তীতে শিশু যখন ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করে, তখন প্রতি পদে পদে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে। নানান ধরনের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

আজকে যে সকল ব্যক্তি মানুষ বাবা-মায়ের সাথে অন্যায় আচরণ করে, খুঁজে দেখলে পাওয়া যাবে যে ঐ ব্যক্তির বাবা-মা ব্যক্তির যথাযথ সামাজিকীকরণের পদক্ষেপ নেয়নি অথবা কৌশলে এড়িয়ে গেছে। যার ফল স্বরূপ বাবা-মা ভোগান্তিতে পড়েছে। অথচ, সন্তানের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে দেখি হরহামেশা। যেকোন ঘটনার কার্যকারণ থাকে, সেটা না খুঁজে দোষ চাপিয়ে দেয়াটা অন্যায়।